হাজার হাজার মানুষকে মারার' অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার চাইলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়া মাইক্রোবাস চালক খোকন চন্দ্র বর্মণ।
মামলারএই সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, "যারা হাজার হাজার মানুষকে মারলো সেই শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, কাউয়া কাদের (ওবায়দুল কাদের), পুলিশের সাবেক প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও শামীম ওসমানের বিচার চাই। তারা দায়ী, তাদের বিচার চাই।"
আজ রোববার বেলা সোয়া এগারটায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার প্রথম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
এর আগে, সকাল পৌনে এগারটায় ট্রাইব্যুনালে আসেন অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। মামলার শুনানির শুরুতেই বক্তব্য রাখেন তিনি।
অ্যাটর্নি জেনারেল তার বক্তব্যে বলেন, "এ স্বৈরাচার শুধু পালিয়ে যায়নি, তার কেবিনেট সদস্য, শপথবদ্ধ সংসদ সদস্য সবাই পালিয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন স্বৈরাচারের জন্ম হয়নি।"রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এই আইন কর্মকর্তা শেখ হাসিনাসহ এ মামলার তিন আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।পরে এ মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
বিবিসি বাংলার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ বিবিসি বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল
তিনি বলেন, "এই প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এর মধ্য দিয়ে আমরা প্রমাণ করব যে, বাংলাদেশের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্পৃহা একটি জীবন্ত অঙ্গীকার। যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলমান থাকবে।"
ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণ অভ্যুত্থানকে ঘিরে নিহত ও আহতদের নিয়ে একটি ডকুমেন্টারিও প্রদর্শন করা হয়।
এছাড়া প্রথম সাক্ষীর গুলিবিদ্ধ অবস্থার একটি ভিডিও দেখানো হয় টেলিভিশনের মনিটরে।
এ মামলার তিন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে পলাতক দেখিয়ে বিচার শুরু হয়েছে।
মামলার একমাত্র গ্রেফতার আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের উপস্থিতিতেই সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের এজলাসে আসামির কাঠগড়ায় চেয়ারে বসে বিচারের সব কার্যক্রম দেখছিলেন তিনি।
বরাবরের মতোই সাদা, লাল, কালো রঙের চেক শার্ট পরিহিত পুলিশের এই সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে শুনানির সময় কখনো চোখ বন্ধ অবস্থায় থাকেন; আবার কখনো তার সামনে থাকা মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়।
মি. মামুন এই মামলায় অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেবেন বলে এর আগে ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছিলেন।
আজ এ মামলায় সাক্ষীর জবানবন্দি শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সব শুনানি বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
এদিকে, এই বিচারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত দাবি করে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ।
রোববার এক বিবৃতিতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের অন্যতম একজন মুখপাত্র মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন হিসেবেই মনে করছেন তারা।